৪.
আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমি বিজয়ী হবে।
তোমার ডান হাতে যা আছে তুমি তা নিক্ষেপ কর। এটা যা কিছু তারা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তা তো কেবল যাদুকরের কলাকৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবে না।
৫.
সুতরাং এভাবে প্রকাশ হয়ে গেল সত্য বিষয় এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল।
সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল।
এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল।
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে
এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
৮. হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ এর তাফসীরে মুজাহিদ, ইকরিমাহ, হাসান, কার্তাদাহ ও জাহহাক বলেনঃ যাদুকারিনীদের। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৫৭৩)
৯. ইবনে জারীর আততাবারী বলেনঃ অর্থাৎ ঐ সমস্ত যাদুকারিনীর অনিষ্ট হতে যারা সুতার গ্রন্থীতে ফুৎকার দেয় তখন তারা তার উপর মন্ত্র পড়ে। (তাফসীর আল-কাসেমীঃ ১০/৩০২)
১০.
حديث عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُحِرَ، حَتَّى كَانَ يَرَى أَنَّهُ يَأْتِي النِّسَاءَ وَلاَ يَأْتِيهِنَّ قَالَ سُفْيَانُ (أَحَدُ رِجَالِ السَّنَدِ) وَهذَا أَشَدُّ مَا يَكُونُ مِنَ السِّحْرِ إِذَا كَانَ كَذَا فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ أَعَلِمْتِ أَنَّ اللهَ قَدْ أَفْتَانِي فِيمَا اسْتَفْتَيْتُهُ فِيهِ أَتَانِي رَجُلاَنِ فَقَعَدَ أَحَدُهُمَا عِنْدَ رَأْسِي، وَالآخَرُ عِنْدَ رِجْلَيَّ، فَقَالَ الَّذِي عِنْدَ رَأْسِي لِلآخَرِ: مَا بَالُ الرَّجُلِ قَالَ: مَطْبُوبٌ قَالَ: وَمَنْ طَبَّهُ قَالَ: لُبَيْدُ ابْنُ أَعْصَمَ، رَجُلٌ مِنْ زُرَيْقٍ، حَلِيفٌ لِيَهُودَ، كَانَ مُنَافِقًا قَالَ: وَفِيمَ قَالَ: فِي مُشْطٍ وَمُشَاقَةٍ قَالَ: وَأَيْنَ قَالَ: فِي جُفِّ طَلْعَةٍ ذَكَرٍ تَحْتَ رَعُوفَةٍ، فِي بِئْرِ ذَرْوَانَ قَالَتْ: فَأَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْبِئْرَ حَتَّى اسْتَخْرَجَهُ فَقَالَ: هذِهِ الْبِئْرُ الَّتِي أُرِيتُهَا وَكَأَنَّ [ص: 60] مَاءَهَا نُقَاعَةُ الْحِنَّاءِ، وَكأَنَّ نخْلَهَا رُؤُوسُ الشَّيَاطِينِ قَالَ: فَاسْتُخْرِجَ قَالَتْ: فَقُلْتُ أَفَلاَ، أَي، تَنَشَّرْتَ فَقَالَ: أَمَا وَاللهِ فَقَدْ شَفَانِي، وَأَكْرَهُ أَنْ أُثِيرَ عَلَى أَحَدٍ مِنَ النَّاسِ شَرًّا
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর একবার যাদু করা হয়। এমন অবস্থা হয় যে, তাঁর মনে হতো তিনি বিবিগণের কাছে এসেছেন, অথচ তিনি আদৌ তাঁদের কাছে আসেননি। সুফ্ইয়ান বলেনঃ এ অবস্থা খুব যাদুর চরম প্রতিক্রিয়া। বর্ণনাকারী বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং বলেনঃ হে আয়িশা! তুমি অবগত হও যে, আমি আল্লাহ্র কাছে যে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম তিনি আমাকে তা বাতলিয়ে দিয়েছেন। (স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক এলেন। তাদের একজন আমার মাথার নিকট এবং অন্যজন আমার পায়ের নিকট বসলেন। আমার কাছের লোকটি অন্যজনকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ লোকটির কী অবস্থা? দ্বিতীয় লোকটি বললেনঃ একে যাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বললেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বললেনঃ লাবীদ ইবনু আ‘সাম। এ ইয়াহূদীদের মিত্র সুরাইক গোত্রের একজন; সে ছিল মুনাফিক। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসের মধ্যে যাদু করা হয়েছে? দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তর দিলেনঃ চিরুনী ও চিরুনী করার সময় উঠে যাওয়া চুলের মধ্যে। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেনঃ সেগুলো কোথায়? উত্তরে দ্বিতীয়জন বললেনঃ পুং খেজুর গাছের জুবের মধ্যে রেখে ‘যারওয়ান’ নামক কূপের ভিতর পাথরের নীচে রাখা আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত কূপের নিকট এসে সেগুলো বের করেন এবং বলেনঃ এইটিই সে কূপ, যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। এর পানি মেহদী মিশ্রিত পানির তলানীর ন্যায়, আর এ কূপের (পার্শবর্তী) খেজুর গাছের মাথাগুলো (দেখতে) শয়তানের মাথার ন্যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ সেগুলো তিনি সেখান থেকে বের করেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি এ কথা প্রচার করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র কসম, তিনি আমাকে শিফা দান করেছেন; আর আমি মানুষকে এমন ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে।
(বুখারী পর্ব ৭৬ অধ্যায় ৪৯ হাদীস নং ৫৭৬৫; মুসলিম ৩৯/১৭, হাঃ ২১৮৯)
১১.
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا يَحْيَى، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم سُحِرَ حَتَّى كَانَ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ صَنَعَ شَيْئًا وَلَمْ يَصْنَعْهُ.
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যাদু করা হয়েছিল। ফলে তিনি ধারণা করতেন যে, তিনি এ কাজ করেছেন অথচ তিনি তা করেননি।
(বুখারী ৩১৭৫)
১২.
وعَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ اقْرَءُوا الزَّهْرَاوَيْنِ الْبَقَرَةَ وَسُورَةَ آلِ عِمْرَانَ فَإِنَّهُمَا تَأْتِيَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا غَيَايَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ تُحَاجَّانِ عَنْ أَصْحَابِهِمَا اقْرَءُوا سُورَةَ الْبَقَرَةِ فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ وَلاَ تَسْتَطِيعُهَا الْبَطَلَةُ قَالَ مُعَاوِيَةُ بَلَغَنِى أَنَّ الْبَطَلَةَ السَّحَرَةُ
আবু উমামাহ বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা, তা কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীদের জন্য সুপারিশকারীরূপে উপস্থিত হবে। তোমরা দুই জ্যোতির্ময় সূরা; বাক্বারাহ ও আ-লে ইমরান পাঠ কর। কারণ উভয়েই মেঘ অথবা উড়ন্ত পাখীর ঝাঁকের ন্যায় কিয়ামতের দিন উপস্থিত হয়ে তাদের পাঠকারীদের হয়ে (আল্লাহর নিকট) হুজ্জত করবে। তোমরা সূরা বাক্বারাহ পাঠ কর। কারণ তা গ্রহণ করায় বরকত এবং বর্জন করায় পরিতাপ আছে। আর বাতেলপন্থীরা এর মোকাবেলা করতে পারে না।” মুআবিয়াহ বিন সাল্লাম বলেন, ‘আমি শুনেছি যে, বাতেলপন্থীরা অর্থাৎ যাদুকরদল।’ (মুসলিম ১৯১০)